নিজস্ব প্রতিবেদক :
নওগাঁর রাণীনগরের শিয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা,অনুমোদন ছাড়াই গাছ কর্তনসহ নানা রকম অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় এমপির নিকট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, শিয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ সরকার ২০১১ সালে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এরপর থেকে সেচ্ছাচারিতা,দূর্নীতি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতহানা, টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ,বিভিন্ন ডোনেশনের টাকা প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে না রেখে নিজ একাউন্টে রাখা,ইচ্ছে মতো ভাউচার তৈরি করা, ,কোন অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়ের চারটি গাছ কর্তন, সহকারী শিক্ষকদের না জানিয়ে যে কোন বিষয়ে ইচ্ছে মতো যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া,অনিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসাসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পরে। এঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে শিক্ষকদের লিখিত এবং মৌখিক ভাবে শোকজ এবং হাজিরা খাতায় সহি ও বিলের ফরমে সহিবন্ধ করে রাখে। এ ছাড়া শোকজ সুধরাতে একজন মৌলানা শিক্ষকের নিকট থেকে ৫হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে সমাধান করা,স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে কেরানীকে পুকুরের পানিতে নেমে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উত্তম কমারের সহায়তায় এসব অনিয়ম দূর্নীতি করেন এবং শিক্ষকদের মধ্যে বেশ কয়েক বার হাতা-হাতির ঘটনাও রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।এসব বিষয়ের প্রতিকার চেয়ে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।এব্যাপারে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরজাহান ওলী ,শরীর চর্চা শিক্ষক শফিউল আলম,সহকারী শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ,মাওলানা শিক্ষক খায়রুজ্জামানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন,প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জরিয়ে পরেছেন। যে কোন বিষয়ে কথা উঠলেই প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে কথা বলেন,কথায় কথায় প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ বলেন,“মহাস্থান গড়ে আত্যাচারি পশুরামকে শায়েস্তা করতে আল্লাহ যেমন শাহসুলতানকে পাঠিয়েছিলেন তেমনি এই বিদ্যালয়ে মুসলমানদের অত্যাচার দমন করতে ভগবান আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন”। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষকদের হেয় করতে বংশ তুলে তিরস্কারমূলক কথা বলেন এবং যখন-তখন লিখিত এবং অলিখিতভাবে শোকজ করেন। মাওলানা শিক্ষককে শোকজ করে ৫ হাজার টাকা নিয়ে সমাধান করেছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে বেশ কয়েক বার হাতা-হাতির ঘটনাও ঘটেছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ঠদের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি অনিয়ম,দূর্নীতি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতহানা অভিযোগের বিষয়কে নাকোচ করে বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গেলে একটু ত্রুটি হতেই পারে।এ ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে তিনি বলেন,শিক্ষকরায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক কেচের প্রসেস করছি আর তারা বাঁচার জন্য আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে জানিয়ে তিনি আলোচিত বিগত ৫ মে হেফাজত ইসলামের নৈরাজ্য থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যে কোন সরকারের আমলে হিন্দুরা নির্যাতিত। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা সুষ্ঠু রাখতে শিক্ষকদের ভয় দেখানোর জন্য মৌখিক ও লিখিতভাবে শোকজ করা হয়। অনুমোদন ছাড়া বিদ্যালয়ের গাছ তৎকালীন সভাপতি কর্তন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বুলবুল বলেন,প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে কোন অন্তদ্বন্দ্বের কারণে এমন হচ্ছে। তবে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি দ্বন্দ্ব মিটিয়ে শান্তি ফিরানোর জন্য। নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবারুল ইসলাম বলেন,শিয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। ঘটনা সঠিক হলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply